শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০৬:৩৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
১৮ শতাংশ বাড়ছে গ্যাসের দাম

১৮ শতাংশ বাড়ছে গ্যাসের দাম

স্বদেশ ডেস্ক:

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসছে আজ। গ্রাহক ভেদে গ্যাসের দাম পৌনে ১১ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। গড়ে বাড়তে পারে ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আজ রোববার বেলা ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দাম ঘোষণা করবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এমনিতেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সব শ্রেণীর ভোক্তা ও শিল্প উদ্যোক্তারা নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে উদ্যোক্তারা মুনাফার মার্জিন কমিয়ে পণ্য রফতানি করছেন। ইতোমধ্যে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে সবধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে বিদ্যুতের দামও বেড়ে যাবে। এক দিকে গ্যাসনির্ভর শিল্পগুলোর ব্যয় বাড়বে, একই সাথে বিদ্যুতের দাম বাড়বে, পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যাবে। পণ্যমূল্য আরো বাড়বে। এতে জনসাধারণের দুর্ভোগ যেমন বাড়বে, তেমনি উদ্যোক্তারাও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

গত মার্চে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ওপর গণশুনানির আয়োজন করেছিল বিইআরসি। ওই গণশুনানিতে সব ধরনের ভোক্তা এর বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু এরপরেও বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির পক্ষে মতামত দিয়েছিল। আর ওই মতামতের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসছে আজ।

সবশেষ ২০১৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। ওই সময়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশে পাইকারি দর প্রতি ঘনমিটার ১২ টাকা ৬০ পয়সা করা হয়। ভর্তুকি দিয়ে ৯ টাকা ৭০ পয়সা বিক্রির নির্দেশ দেয় বিইআরসি।

জানা গেছে, সব শ্রেণীর গ্রাহকের গ্যাসের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করে সব বিতরণ কোম্পানি। আবাসিক গ্রাহকের ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৯ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৩৫ পয়সা এবং শিল্পে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটারের গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়। একই সাথে ক্যাপটিভে (শিল্পকারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস) ১৩ টাকা ৮৫ পয়সার স্থলে ৩০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়।

এর আগে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর বিইআরসির গণশুনানিতে সব ধরনের ভোক্তাই বিরোধিতা করেছিলেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রত্যেকটিই মুনাফায় রয়েছে। অন্য দিকে বর্তমান অবস্থায় জনগণের বাড়তি দাম দেয়ার সামর্থ্য নেই। আর কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখিয়ে দিয়েছি যে, গ্যাসের দাম ১৬ পয়সা কমানো যায়। করোনার কারণে সঙ্কটকালীন সময় পার করছি, এমন সময়ে ভর্তুকি বাড়ানোর কথা, সেখানে আগের নির্ধারিত ভর্তুকির অর্থই দেয়া হয়নি। প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার কথা, এখন পর্যন্ত দিয়েছে মাত্র তিন হাজার কোটি টাকা। সরকার আর ভর্তুকি দেবে না এমন কথা বলেনি। তারপরও বিইআরসি কারিগরি কমিটি অন্যায়ভাবে সেটাকেই (তিন হাজার কোটি) ভিত্তি ধরে হিসাব করে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার ভাট-ট্যাক্সসহ নানাভাবে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কোন কোম্পানি কত ডিভিডেন্ট দিবে সেই সিদ্ধান্তও চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা মুনাফা তুলে দিচ্ছে আর কোম্পানিগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে গ্রাহকের কাছে টাকা চাইছে। কিন্তু মালিক হিসেবে সরকারের দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করা। কোম্পানিগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিতরণ মার্জিন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

পেট্রোবাংলার সূত্র জানিয়েছে, গ্যাসসঙ্কট কাটাতে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর ভর্তুকির চাপ বেড়ে গেছে। এ চাপ সামলাতে গত ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর পরামর্শ দেয় আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল। এরপর গত ৩ জানুয়ারি জ্বালানি বিভাগ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে পাঠানোর জন্য পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দেয়। পরে পেট্রোবাংলা থেকে আমদানি করা এলএনজি ও দেশীয় গ্যাসের দাম, ভ্যাট-ট্যাক্স, বিভিন্ন তহবিলের চার্জ ধরে একটা খসড়া হিসাব বিতরণ কোম্পানিগুলোতে ৫ জানুয়ারি পাঠানো হয়। এরপর বিতরণ কোম্পানিগুলো নিজেদের আয়-ব্যয় হিসাব উল্লেখ করে প্রায় একই ধরনের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব কমিশনে পাঠায়। একই সাথে কোম্পানিগুলো নিজেদের পরিচালন ব্যয় (মার্জিন) বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেয়।

দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের প্রস্তাবে বলে, এলএনজি আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরে দেশী-বিদেশী গ্যাস কেনা ও সরবরাহ, পরিচালন ব্যয়, ভ্যাট-ট্যাক্স ও নানা চার্জ মিলিয়ে ৬৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে বছরে ৮৭৮ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানিতে ৪৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটার এলএনজিতে ব্যয় ৫০ টাকা ৩৮ পয়সা, যার মধ্যে ক্রয়মূল্য ৩৬ টাকা ৬৯ পয়সা, আমদানি পর্যায়ে মূসক ৫ টাকা ৫০ পয়সা, অগ্রিম আয়কর ৭৪ পয়সা, ফাইন্যান্সিং ব্যয় ১ টাকা ৪৪ পয়সা, ব্যাংক চার্জ ও কমিশন ৫৯ পয়সা, রিগ্যাসিফিকেশন ব্যয় ১ টাকা ৮৬ পয়সা, অপারেশনাল ব্যয় ৫ পয়সা এবং ভোক্তা পর্যায়ে উৎসে কর ৩ টাকা ৫২ পয়সা (৭%)। দেশে কার্যরত বিদেশী গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) গ্যাস কিনতে ব্যয় হবে প্রতি ঘনমিটারে ২ টাকা ৯১ পয়সা। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (এসজিএফএল) ও বাপেক্সের পরিচালন ব্যয় ধরা হয় প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৮৭.৯৮ পয়সা, ৩৩.৮৩ পয়সা ও চার টাকা ৫৫ পয়সা। এ ছাড়া প্রতি ঘনমিটারে পরিচালন মার্জিন সঞ্চালন কোম্পানির (জিটিসিএল) ৮৬.৪৮ পয়সা, বিতরণ কোম্পানির ২৭.৪৯ পয়সা ধরা হয়।

প্রতি ঘন মিটারে পেট্রোবাংলার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় পয়সা, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে ৪৬.১৪ পয়সা এবং জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলে ৮৮.৭০ পয়সা চার্জ ধরা হয়। সরকারের হিস্যা হিসাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধরা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877